আজকে আমাদের সেশন টা হবে সেই ভাই দের কে নিয়ে যারা সমাজকে বদলানোর প্রত্যাশা করে। যারা আসলেই নিজের খেয়ে নিজের পরে বনের মহিশ তাড়িয়ে বেড়ায়! যারা দেশের যেকোনো দুর্যোগে নিজ থেকে এগিয়ে আসে কোনো প্রকার সুবিধা গ্রহনের আসা না করেই।
তাদের আমরা ভলেন্টিয়ার বলে চিনি।
আমাদের দেশে অনেক অনেক তরুন সমাজ আছে যারা চায় দেশের জন্য কিছু করতে। হতে পারে সমাজের সচেতনতা মুলক কিছু । হতে পারে দেশের ক্রান্তিকালে ক্ষতিগ্রস্থ জনগনের পাসে থেকে সাহায্য করতে। ভলেন্টিয়াররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে প্রান্তিক জনগণের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেয়। আবার অনেক তরুন নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। কিন্তু তারা এতো কিছু করে কোনো প্রকার ব্যাক্তিগত সুবিধা গ্রহনের ছাড়াই।
এখন প্রশ্ন হলো কেনো একজন তরুন কে ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে হবে?
কারন আমাদের দেশ টা সয়ংসম্পুর্ন নয়, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তার উপর বাংলাদেশ আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবন দেশ। সরকারের একার পক্ষে দেশের সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আমারা যার যার স্থান থেকে কিছু করি তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এটা ভেবেই আমাদের তরুন সমাজ ক্রোমেই একতাবদ্ধ হচ্ছে। যেমন এখান আমরা অনেক ব্লাড ডোনেশন ক্লাব দেখি, যা কিছুদিন আগেও খুব একটা চোখে পড়তো না।
তবে মনে রাখতে হবে, নিজের স্প্রিহা থেকে ভলেন্টিয়ারিং করতে গিয়ে যাতে নিজের ক্যারিয়ারকে ভুলে না যাই। অন্যের জন্য কাজ করার পাসা পাশি নিজেকে ডেভালপম করতে হবে যাতে কর্মজীবনে কোনো বেগ পেতে না হয়। এমন ভাবে সব কিছু সিখতে হবে যাতে এই ভলেন্টিয়ারিং কেই একটি অভিজ্ঞতা হিসাবে সিভি ব্যাবহার করা যায়।
না হলে পরবর্তীতে নিজের মুখোমুখি হতে হবে, এটা ভেবে যে আমি এতোটা সময় অন্যের জন্য কাজ করে কি নিজের সময় ও শ্রম নস্ট করলাম কিনা। এমনটা যাতে কোনো দিনো ভাবতে না হয় তার জন্য একজন ভলেন্টিয়ারকে যা যা করতে হবে তা হলোঃ
ভলান্টিয়ারিং এর মাধ্যমে নেটওয়াকিং করতে হবেঃ বর্তমান বিশ্বের একটি বড় শক্তি হচ্ছে নেটওয়ার্কিং। ভলান্টিয়ারদের বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন পেশার ও বিভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে কাজ করার ও পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে। তাই ভলেন্টিয়াররা খুব সহজে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে । এই সুজোগ মিস করা যাবে না।
নতুন বন্ধু বানাতে হবেঃ ভলান্টিয়ারিং আমাদের নতুন নতুন মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ করে দেয় । এখান থেকে আমাদের সেরা বন্ধু নির্বাচন করতে হবে।
ভলান্টিয়ারিং এর মাধ্যমে নতুন নতুন সফট স্কিল, হার্ড স্কিল এবং অভ্যাস গঠন করতে হবেঃ পাশাপাশি নিজের মধ্যে থাকা স্কিল গুলোও বাড়িয়ে নিতে হবে। অনেক সময় ভলেন্টিয়াররা বিনা মুল্যে বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভলপমেন্ট ট্রেনিং পেয়ে থাকে। এছাড়া ভলান্টিয়ারিং আমাদের প্রফেশনাল লাইফে কাজ করা সহজ করে দেয়। তবে মনে রাখতে হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভলেন্টিয়ারদের অনেক অনেক ট্রেইনিং অফার করেবে কিন্তু যার বাস্তবিক অর্থে এতোটা গুরুত্ব নেই বা আপনার কোনো কাজে আসবে না সেগুলো না করাই ভালো। ধরুন আপনি কমার্সের স্টুডেন্ট। আপনাকে অবশ্যই ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক ট্রেইনিং থেকে হিউম্যান বিহেভিয়ার বা কমিউনিকেশন বিষয়য়ক ট্রেইনিং কে গুরুত্ব দিতে হবে। যা আপনি ফিউচার ক্যারিয়ারে কাজে লাগাবে।
যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবেঃ যেটা আমাদের জীবনের উন্নতি করার বড় হাতিয়ার। যার যোগাযোগ দক্ষতা যত ভাল জীবনে সে তত বেশি সুবিধা গ্রহন করতে পারে । ভলান্টিয়ারিং আমাদের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মেশার সুযোগ করে দেয় । যা থেকে কমিউনিকেশন দক্ষতাকে বাড়িয়ে নেবার সুজোগ হাতছাড়া করা যাবে না।
নেতৃত্বের গুনাবলি অর্জন করতে হবেঃ লিডারশিপ স্কিল আমাদের বাস্তব জীবনে ও আমাদের কর্মক্ষেত্রের জন্য খুবই জরুরি । ভলান্টিয়ারিং করার সময় দেখা যায় বেশির ভাগ সময় টিম হিসেবে কাজ করতে হয় যেখানে একজনকে নেতৃত্ব দিতে হয় । যার ফলে রোটেশনের মাধ্যমে সকল ভলেন্টিয়ারগন নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পান । যা ভলেন্টিয়ারদের নেতৃত্বের গুণাবলী গঠনে সাহায্য করে।
চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার গুনাবলী অর্জন করতে হবেঃ এখন শুধু একাডেমিক সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পাওয়া যায় না। দরকার পরে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা। এদিকে লেখাপড়া করার সময় চাকরি করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না বিধায় অভিজ্ঞতা অর্জনও সম্ভব হয় না। চাকরির ক্ষেত্রে যেসব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা প্রয়োজন তা একজন ভলেন্টিয়ার সহজেই অর্জন করতে পারে ।
<span;>এ ক্ষেত্রে আপনি যে সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান সে ধরণেরই কোন একটা প্রতিষ্ঠানে ভলান্টিয়ারিং করতে হবে। যা ভবিষ্যতে আমাদের চাকরিক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে।
তবে অন্য সেক্টরে ভলান্টিয়ারিং করলেও সমস্যা নেই। যে কোন ধরণের ভলান্টিয়ারিং-ই সিভিতে অভিজ্ঞতা, এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি হিসেবে যোগ করতে হবে। সামাজিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে ভলান্টিয়ারিং এর অভিজ্ঞতা থাকলে তা যে কোন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বের সাথে নেয়।
সর্বপরি ভলান্টিয়ারিং এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রেখে আত্মবিশ্বাসী হতে হবেঃ কারন ভলান্টিয়ারিং করার সময় চলাফেরা ও অনেক ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়, অনেক ধরনের মানুষের সাথে মিশে কাজ করতে হয়। যা একজন মানুষকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে এবং মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে। তাই ভলেন্টিয়ারিং এ সময় একটিভ থাকিতে হবে যাতে মন সকল প্রকার টেনশন ফ্রি থাকতে পারে।
<span;><span;>এই কয়টা বিষয় মাথায় রাখলে আপনি ভলেন্টিয়ারিং এর মাধ্যমে সমাজের জন্য কিছু করার পাশা পাশি নিজেকেও অন্নত করে ফেলতে পারেন।